আমেরিকার ভিসা আবেদনের নিয়ম, যোগ্যতা ও খরচ 2024

আপনি কি আমেরিকার ভিসা আবেদনের নিয়ম, যোগ্যতা ও খরচ সম্পর্কে জানতে চান? স্বপ্ন কে না দেখতে চায়। সবাই চায় নিজের জীবনকে গুছিয়ে ভালো একটি জীবন পার করতে। কথায় আছে স্বপ্ন পূরনের দেশ আমেরিকা। তাই বলা বাহুল্য স্বপ্ন পূরনে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। চাকচিক্যময় জীবন এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ আমেরিকা। 

প্রতি বছর বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আমেরিকায় পাড়ি দেয়। বাংলাদেশের মানুষও সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যেতে তরুনদের বেশি  দেখা যায়। আমেরিকা ভিসা তাই সকলের কাছেই সোনার হরিনের চেয়ে কম নয়। তবে অনেকেই আমেরিকার ভিসা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না।

কীভাবে সহজেই আমেরিকান ভিসা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানে না। আমেরিকার ভিসা পাওয়ার উপায় জানা থাকলে খুব সহজেই আপনি আমেরিকা গিয়ে জীবন পরিবর্তন করতে পারেন। আমাদের আজকের আর্টিকেল আমেরিকা যাওয়ার উপায় সম্পর্কেই। চলুন জানা যাকঃ 

আমেরিকার ভিসার ধরন 

আমেরিকার ভিসা আবেদন মূলত নির্ভর করে আপনি সেখানে কী জন্য যেতে চান? গিয়ে কী করতে চাচ্ছেন? তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশিদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের দূতাবাস দিয়েছে এবং কনস্যুলেটের মাধ্যমে তারা ভিসা ইস্যু করে থাকে। তাছাড়া আপনি  যদি ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে সদস্য অংশগ্রহণকারী ৩৯টি দেশের নাগরিক হন, তাহলে আপনার ব্যাবসায়ীক কাজে এবং আপনি চাইলে ছুটি কাটাতে আমেরিকা গেলে আপনার ভিসার প্রয়োজন হবে না। আমেরিকার ভিসা পাওয়ার উপায় সহজে হলেও কিছু নিয়ম জানতে হয়। চলুন জানা যাক আমেরিকা কী কী ভিসা দিয়ে থাকে সে সম্পর্কে- 

১) অভিবাসী ভিসাঃ 

এটি মূলত আমেরিকার স্থায়ীকরন নাগরিক হতে চাইলে এই ভিসার আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে সেদেশে দীর্ঘদিন থাকলে আপনি আবেদন করতে পারবেন। 

২) ভিজিটর ভিসাঃ 

এই ভিসা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। অনেকেই রয়েছে যারা বাহিরের দেশ থেকে পন্য এনে নিজের দেশে ব্যবসা করে। সেক্ষেত্রে তাদের পন্য দেখে আনতে হলে যে দেশ থেকে পন্য আনবে সে দেশে যেতে হয়। আমেরিকার পন্যের চাহিদা সারা বিশ্বে রয়েছে। তাই প্রতিবছর আমেরিকায় বিশ্বের নানা পান্ত থেকে লোক যায় তাদের ব্যবসার জন্য। তাই তাদের উদ্দেশ্যেই ব্যবসায়ীক ভিসা দিয়ে থাকে। 

৩) শিক্ষার্থীদের ভিসাঃ

 আমেরিকায় বিশ্বের নামি দামী বহুল বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা সহ সুযোগ সুবিধা ভালো থাকায় অনেকেই সেখানে পড়তে যায়। সেক্ষত্রে তাদের জন্য আমেরিকা এই ভিসা দিয়ে থাকে। তবে তাদের পড়াশুনা শেষ হয়ে গেলে ভিসা মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

৪) পেশাজীবী ভিসা কানাড ও মেক্সিকোর নাগরিকদের জন্যঃ 

পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থার কারণে আমেরিকা কানাডা ও মেক্সিকো তাদের আয়তন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। যেহেতু তাদের সীমান্ত খুব কাছেই ।সেজন্য মেক্সিকো এবং কানাডা নাগরিকরা আমেরিকায় এসে চাকরি করতে চায় ভালো টাকা উপার্জনের জন্য। সে ক্ষেত্রে সে দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকা এই ভিসাটি চালু করেছে।

৫) ট্রানজিট ভিসাঃ 

ভ্রমণ করতে কেনা পছন্দ করে। কিন্তু আপনি চাইলেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে খুব সহজেই যেতে পারবেন না। কিছু কিছু দেশে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে একটি দেশে অবতরণ করতে হবে তারপর সেই দেশ থেকে আপনাকে অন্য আপনার যে গন্তব্য রয়েছে সে দেশের ভিসা নিয়ে সেই যেতে হবে।

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। শুধু আমেরিকার ভিসা না যে কোন দেশের ভিসার আবেদনের জন্যই কিছু কাগজপত্রের দরকার হয়। এ সকল কাগজপত্র সঠিক না হলে আপনি সহজে ভিসা পাবেন না। যেকোন ভিসা আবেদন করতে গেলেই এই ডকুমেন্ট আপনার দরকার হবে।

চলুন এবার জানা যাক পার্সপোর্টের পাশাপাশি  কী প্রয়োজন ভিসার জন্যঃ 

শিক্ষার্থীরদের ক্ষেত্রে:

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট
  • আমেরিকান কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির লেটার।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ সকল সার্টিফিকেট।
  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (IELTS, TOEFL,GRE ইত্যাদির মার্ক)। 
  • অব্যশই শিক্ষার্থীর বয়স ১৪ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পন্সরশিপ চিঠি, স্কলারশিপ ইত্যাদি সহ সকল খরচ বহন ক্ষমতা থাকতে হবে। 
  • শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা ও কর্মজীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত করতে হবে। 
  • নিজ দেশের পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট লাগবে।
  • সর্বশেষে মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট।

ব্যবসায়ী বা ভিজিটরদের ক্ষেত্রেঃ 

  • আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।কী জন্য যাচ্ছেন জানাতে হবে। 
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট থাকতে হবে ।
  • মেডিকেল রিপোর্ট কার্ড থাকতে হবে। 
  • ট্রাভেল রেকর্ডের প্রমাণ সহ পূর্বে ভ্রমন করেছেন কী না। 
  • আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ রয়েছে কী না।
  • ইংরেজি ভাষা আপনার দক্ষতার সার্টিফিকেট।
  • ব্যাংক স্ট্যাটম্যান্ট।

পেশাজীবীদের ক্ষেত্রেঃ 

  • আমেরিকার কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার লেটার থাকলে সেটি প্রমান হিসেবে। 
  • স্কিল সার্টিফিকেট বা আপনি কোন কাজে অভিজ্ঞ সে ব্যাপারে জানাতে হবে। 
  • কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অবগত করতে হবে।

আমেরিকায় ভিসা আবেদন নিয়ম

বর্তমানে তথ্য নির্ভর যুগে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। ভিসার আবেদন করতে হলে প্রথমে আপনাকে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে  গুগল ক্রোমে প্রবেশ U.S Embassy in Bangladesh govt অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের প্রবেশ করুন। 

সে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এখানে আপনি আমেরিকার ভিসা আবেদনের একটি সেকশন দেখতে পারবেন। আপনার যে তথ্যগুলো চাচ্ছে সেসকল সঠিক তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। এভাবে যদি না পারেন তাহলে কোন কম্পিউটারের দোকান বা কোন ভিসা  এজেন্সির মাধ্যমে আমেরিকার ভিসার আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যেতে কত খরচ হয়

আমেরিকায় যাওয়াটা বর্তমান সময়ে একটু ব্যয়বহুল। তবে যারা শিক্ষার্থী তারা যদি স্কলারশিপ এবং যাঁদের সরকারি ভিসা রয়েছে  বা সে দেশের নাগরিক আত্মীয় তাদের ক্ষেত্রে খরচ তুলনামূলক কম। তবে সাধারনত আমেরিকায় যাওয়ার খরচ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬-১৪ লক্ষ টাকা। আপনার ভিসার ওপর নির্ভর করবে আপনার খরচ। 

আমেরিকা ভিসা আবেদন কেন্দ্র সমূহ

ঢাকা- ঢাকায় অনেক আমেরিকার ভিসা কেন্দ্র রয়েছে । তবে অনেকগুলো প্রতারনা দিয়ে ভরা। তাই জেনে শুনে তারপর টাকা দিবেন। 

১)নামঃ আমেরিকা ভিসা সেন্টার

 নাম্বারঃ ০১৭১২৪২৬৬৩১

ঠিকানাঃ ১০৪,গোলবে চেম্বার,ঢাকা ১০০০,ঢাকা।

আমেরিকার ভিসা আবেদনের খরচ 

আমেরিকার ভিসা আবেদনের খরচ ১৬ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্ভর করবে আপনি কি ভিসার জন্য আবেদন করছেন তার ওপর। সরকারি ভাবে গেলে টাকা কম লাগে। কিন্তু আপনি যদি বেসরকারি ভাবে যান তাহলে টাকা বেশি লাগবে।

আমেরিকার ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে 

আপনার যদি সব কাগজপত্র ঠিক থাকে তাহলে আমেরিকার ভিসা পেতে বেশিদিন সময় লাগবে না। আমেরিকার ভিসা পাওয়ার সময় টা অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কি জন্য যাচ্ছেন তার উপর। যেমন যদি কোন অসুস্থ রোগী চিকিৎসার জন্য যেতে চায় তাহলে সে ক্ষেত্রে ভিসা তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়। আমেরিকা টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে আমেরিকা ভিসা প্রসেসিং তাড়াতাড়ি হয়ে যায় এবং ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভিসা পেতে পারেন।

আমেরিকা যেতে IELTS এ কত পয়েন্ট লাগে 

যেকোনো দেশে যাওয়ার জন্যই আপনাকে এই কোর্সটি করতে হবে। এটি প্রমাণ করে যে আপনি ইংরেজিতে কতটা দক্ষ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরির পয়েন্ট লাগে। আমেরিকা যেতে বিভিন্ন ভিসাতে আপনার বিভিন্ন IELTS পয়েন্ট লাগবে।

স্টুডেন্ট ভিসা: আমেরিকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য IELTS এ আপনার স্কুল অবশ্যই ৬.৫-৮.০ এর মধ্যেই হতে হবে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫.৫ স্কোর হলেও নিয়ে নেয়।

টুরিস্ট ভিসা: আমেরিকার টুরিস্ট ভিসার জন্য আপনার IELTS ৫.৫-৬.০ হতে হবে। 

আমেরিকা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: আমেরিকা ওয়ার্ক আর্মি ভিসা বা আমেরিকা চাকরির ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার IELTS স্কোর কোন নির্ভর করবে আপনি কি চাকরির জন্য যাচ্ছেন তার উপর। ৬.০ এর উপর স্কোর হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

আমেরিকা যেতে কত বছর বয়স লাগে 

আপনি যদি আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চান তবে অবশ্যই আপনার কমপক্ষে ১৪ বছর বয়স হতে হবে। এবং আপনি যদি কোন কাজের জন্য যেতে চান অর্থাৎ ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চান তাহলে আপনার বয়স ১৮ থেকে ২১ এর মধ্যে হতে হবে। বা প্রতিষ্ঠানের চাকরির সার্কুলার এ যে বয়স থাকবে সে বয়সের মধ্যে থাকতে হবে। আর আপনি যদি টুরিস্ট ভিসায় যেতে চান তাহলে নির্ধারিত কোন বয়সসীমা নেই। আপনি যেকোনো বয়সেই যেতে পারবেন।

সবশেষে,

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে আমেরিকাতে অসংখ্য মানুষ পাড়ি জমায়। কেউ যায় কাজের সূত্রে, কেউ যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য আবার কেউ কেউ যায় ঘুরতে। আমেরিকার ভিসা পাওয়া এখন খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। তাই আপনি যদি আমেরিকা যেতে চান তাহলে এখনই ভিসার জন্য আবেদন করে ফেলুন। আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Read more: Bangladesh is losing its share of the garment export market to Vietnam

1 thought on “আমেরিকার ভিসা আবেদনের নিয়ম, যোগ্যতা ও খরচ 2024”

  1. Pingback: Heavy rain is causing floods again in southern Brazil - Jene-Nin

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top